বিশাল আকারের গবেষণাগারকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যেতে পারলে কী সুবিধাই না হতো! কিন্তু চাইলেও অনেক সময় তা করা যম্ভব হয় না। তবে পৃথিবীতে এমন গবেষণাগার যে একটিও নেই, তা বললে ভুল হবে। জনমানবহীন অ্যান্টার্কটিকার ধু ধু বরফের রাজ্যে আছে এমনই এক গবেষণাগার, যেটিকে ইচ্ছা করলেই যেখানে ইচ্ছা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ‘ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে’ নামক গবেষণা সংস্থার পরিচালিত ‘হ্যালি সিক্স’ নামের এই গবেষণাগারটি বিশ্বের প্রথম স্থানান্তরযোগ্য গবেষণাগার।
ধু ধু বরফের রাজ্যে ‘হ্যালি সিক্স’
হিমাংকের নীচে ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যাওয়া তাপমাত্রা কিংবা দিনের পর দিন সূর্যের আলো না দেখেও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে বিজ্ঞানের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন একদল গবেষক। পৃথিবীর আবহাওয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে যাওয়া গবেষকদের মাথার উপর ছাদ হিসেবেও কাজ করে এই গবেষণাগারটি। এই গবেষণাগার থেকেই ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম পৃথিবীর রক্ষাকবচ ওজোন স্তরে ফাটল খুঁজে পাওয়ার ভয়ানক খবরটি বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়েছিলো।
ওজোন স্তরে ফাটল খুঁজে পাওয়ার তথ্যটি এই গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরাই প্রথম নিশ্চিত করেছিলেন
শুধু তা-ই নয়, মেরু এলাকার প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশের অনেকটা মিল থাকায় এই গবেষণাগারে সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে নামিদামি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোরও। মহাকাশে বসবাস আর টিকে থাকার জন্য এই এলাকায় ক্রমাগত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে নাসা আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।
যতদূর চোখ যায়, শুধুই বরফ
১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণাগারের নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত জ্যোর্তিবিদ এডমন্ড হ্যালির নামানুসারে। সেই থেকে শুরু করে মোট পাঁচ প্রজন্ম ধরে চলছে এই গবেষণাগার। এই গবেষণাগারের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিলো পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে পরিবেশগত পরিবর্তনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করা। কিন্তু মেরু অঞ্চল মোটেও সাধারণ কোনো জায়গা নয়, পরিবেশ সেখানে বড়ই নির্মম। পরিবেশগত পরিবর্তন অনেক বেশি হওয়ায় মেরু অঞ্চলে এক জায়গায় দীর্ঘদিন অবস্থান করা সম্ভবপর না-ও হয়ে উঠতে পারে। তাই গবেষণাগারটিকে যেভাবেই হোক মাঝেমধ্যে এদিক সেদিক সরিয়ে নিতে হবে।
বর্তমানে ‘হ্যালি সিক্স’ নামে যে অত্যাধুনিক অবকাঠামোটি রয়েছে, সেটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ইউরো সমপরিমাণ অর্থ। অনেকটা রেলগাড়ির মতো দেখতে এই গবেষণাগারের রয়েছে মোট আটটি অংশ। আটটি কক্ষকে জোড়া লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পুরো অবকাঠামোটি। আটটি কক্ষের প্রতিটিকে একটি আরেকটি থেকে আলাদা করে এদের নিচে থাকা বিশেষ স্কিয়ের সাহায্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় খুব সহজেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রয়োজনটি আরো বেশি করে অনুভূত হয়েছে। কারণ ‘হ্যালি সিক্স’ নামক গবেষণাগারটিকে ‘ব্রান্ট আইস সেলফ’ নামক জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন দেখে দিয়েছিলো। কারণ ঐ এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ফাটল।